বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
উদ্ভীদ
জগৎ একটি বিস্তর জগৎ। উদ্ভীদ জগতের সম্প র্কে আলোচনা করে শেষ করা খুব কঠিন। তবুও
আপনাদের জ্ঞানের পরিসীমা বাড়াতে ও অল্প পরিমাণ উপকার করার স্বার্থে কিছু কথা
আপনাদের না বললেই নয়। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন আমাদের আজকের আলোচনার
বিশয় জেনে নিই। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় আমলকী।
আমলকী সম্পর্কে কিছু আলোচনাঃ
আমলকী
নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংসে এর বিশাল দাপট রয়েছে। কয়েক
ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আমলকীর কার্যকরি গুণ রয়েছে। ইঁদুরের উপর গবেষণা করে
জানা গেছে প্যানক্রিয়াটাইসিস রোগের চিকিৎসায় আমলকী খুব ভাল কাজ করে। অস্টিওপোরোসিস
রোগের চিকিৎসায় আমলকী ব্যাবহার করা হয়। আমলকী ফল, আমলকী গাছের ছাল, পাতা থেকে তৈরী
ঔষধে ডায়বেটিস, প্রদাহ, ক্যান্সার, ও কিডিনী রোগের নিরাময়যোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আমলকী রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
করে, লিভারের কার্যক্ষমাতা পুনরুদ্ধার করে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটা
ইঁদুরের উপর গবেষণা করে জানা গেছে। আমলকীতে ভিটামিন সি বা অ্যাস্করবিক এসিড রয়েছে।
আমলকীর ব্যাবহারঃ
ফল ও
পাতা দুটুই ব্যাবহার করা হয়। আমলকীতে ভিটামিন সি আছে যা কাগজি লেবু, পেয়ারা, কমলা,
আপেল, আম, কলা ইত্যাদির চেয়ে অনেক গুণ বেশী। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তির দিনে ৩০
মিগ্রাঃ ভিটামিন সি এর চাহিদা আছে, আর এই চাহিদা মাত্র ২ টা আমলকীই মিটাতে পারে। আমলকী
খেলে দন্তরোগ, স্কার্ভি হয় না এবং এটা মুখের রুচি বাড়ায়। সর্দি, কাশি,
রক্তশূন্যতা, জন্ডিস ও লিভার, পেট পীড়া ইত্যাদি সমস্যার ক্ষেত্রে আমলকীকে খুব ভাল
ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমলকী বেটে মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে মাথা ঠান্ডা থাকে
ও ঘুম ভাল হয়। চুলের গোঁড়া শক্ত করতে, অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করতে ও চুল উঠা বন্ধ
করতে কাঁচা আমলকী বেটে প্রতিদিন চূলে লাগাতে হবে। এভাবে ১/২ ঘণ্টা রেখে দিয়ে তার
পর চুল ভাল করে ধুয়ে ফলতে হবে। তবে এটা প্রতিদিন গোসলের আগে করাই উত্তম।
আমলকীর ঔষধী গুনাগুনঃ
১. বমি বন্ধ করতে আমলিকি খুব ভাল কাজ করে। বমি বমি ভাব হলে বা বমি হতে
থাকলে আমলকী খেয়ে দেখুন সাথে সাথে বমি বন্ধ হয়ে যাবে।
২. মাথা ও হৃদযন্ত্রের শক্তি বাড়ায় এই আমলকী। আমলকীতে উপস্থিত ভিটামিন
সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিভিন্ন রোগ সারায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩. খাবারের সাথে আমলকীর আচার খেতে পারেন। ইত্যাদি আরো বিভিন্ন রকমে
আমলকী আমাদের কাজে আসে।
৪. ফুটন্ত পানিতে আমলকী টুকরা করে দিয়ে সিদ্ধ হয়ে গেলে পানি ঝড়িয়ে আদা
কুচি, লবণ, লেবুর রস দিয়ে মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে রাখুন সারা বছর আমলকী ভাল থাকবে।
৫. চুল, ত্বক ও চোখ ভাল রাখতেও আমলকী কাজ করে। আমলকীতে রয়েছে ফ্যাট
ক্যামিক্যাল যেটা চোখের সাথে জড়িত ডি জেনারেশন প্রতিরোধ করে।
৬. নিয়মিত আমলকী খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ভাল থাকে, ছানি পড়ে না। এছাড়া
ত্বকের সমস্যায়ও আমলকী সেরা কজটা করে।
৭. আমলকী খেলে মাথা ঠাণ্ডা থাকে ও লিভার সুন্দর ভাবে কাজ করে।
৮. রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং
ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।
৯. শরীর ঠাণ্ডা রাখে, মাথা ঠাণ্ডা রাখে, রক্তে লোহিত কণার সংখ্যা বাড়ায়
এবং দাঁত ও নখকে ভাল রাখে।
১০. এসিডিটি হলে ১ গ্লাস পানি বা দুধের সাথে আমলকী গুঁড়া হালকা চিনি দিয়ে
মিশিয়ে খেতে পারেন।
১১. খিদে বাড়াতে আমলকীর গুঁড়ার সাথে মধু ও মাখন মিশিয়ে খেতে পারেন।
১২. সানস্ট্রোক, সানবার্ন, জ্বর, বদহজম ইত্যাদি
থেকেও রক্ষা করে আমলকী।
১৩. এজমা ও শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে আমলকী।
১৪. অনেকদিন ধরে কাশি হলে আমলকী জাদুর মত কাজ করে।
১৫. আমলকী স্নায়ুতন্ত্রের উপর ভাল কাজ করে।
১৬. পাইলস কমায়, পেটের জ্বালাপোড়া কমায়।
১৭. আমলকী হজম শক্তি বাড়ায়।
১৮. আমলকীর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে ভিটামিন সি, এই ভিটামিন সি থাকায় প্রচুর
পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট তৈরি করতে পারে ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের শরীরে মৌসুমী যে রোগ গুলি রয়েছে যেমন ঠান্ডা, সর্দি, কাশি
ইত্যাদি প্রবেশ করতে পারে না।
স্বাস্থ্য
সম্পর্কিত আরো তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন
বিঃদ্রঃ আমলকী এমনই একটি ঔষধী ফল যার
অন্যান্য ফলের তুলনায় ভেষজ গুণাগুণ অনেকগুণ বেশী। তাই বাড়ির আনাচে-কানাচে যেখানেই
খালি জায়গা আছে আমলকী গাছ লাগান। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য দুটোই বাঁচান।
No comments:
Post a Comment