বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রাচীন কাল থেকে মানুষ গাছ-পালার উপর
নির্ভর করে আসছে। কালের বিবর্তনে মানুষ গাছ-পালা থেকে সরে আসছে। আগেকার মানুষ
গাছ-পালা দিয়েই চিকিৎসা করত। এমনই একটি গাছ হল ধুতরা। এর ভেষজ নাম Dutra Mettle Linn এটি একটি গুল্ম জাতীয় গাছ। এশিয়া উপমহাদেশের প্রায় সকল জায়গাতেই
ধুতরা গাছ দেখা যায়। প্রায় ৫-৬ বছর বাঁচে এই গাছ এবং ৬-৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এই
গাছটি। ঘণ্টার মত দেখতে সাদা রঙের ফুল ধরে ধুতরা গাছে তাই একে ঘণ্টাপুষ্প বলে ডাকে
অনেকে। ধুতরা গাছের অপর নাম কণ্টকফল। কোন
পশু-পাখি এই গাছের ফুল-ফল খায় না। এটি সকলের কাছে পরিচিত। কিন্তু ধুতরার উপকারিতা সম্পর্কে বেশীরভাগ
মানুষের অজানা। ধুতরা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা নিম্নরূপ।
ধুতরা ফুলের কার্যকারিতাঃ
১.উন্মাদনা জনিত সমস্যা হলেঃ
১ গ্রাম বা ৭-৮ রতি ধুতরার সবচেয়ে চিকন বা
সরু শিকড় পাটায় বেটে সেটা আধা লিটার পানিতে গুলে সিদ্ধ করে আনুমানিক ৫০ গ্রাম
পুরাতন চাল, আধা লিটার দুধ ও পরিমাণ মত চিনি দিয়ে পায়েস রান্না করে সকালে বিকালে
খাওয়াতে হবে। তবে রোগীর বয়স, শারীরিক বল ইত্যাদি লক্ষ রাখতে হবে।
২.পাগলা কুকুর ও শেয়ালে কামড়ালেঃ
পাগলা কুকুর ও শেয়ালে কামড়ালে ধুতরার শিকড়
১/২ গ্রাম আবার ৫-৬ গ্রাম কাঁচা শিকড়
একসঙ্গে বেটে ঠাণ্ডা দুধ বা পানি দিয়ে পান করতে বলা হয়েছে।
৩.গলা ব্যাথা হলেঃ
গলা ব্যাথা হলে ধুতরার শিকড়, কাঁচা হলুদ,
শিরীষ ফুল একসাথে বেটে গলায় মালিশ করলে গলা ব্যাথা ভাল হয়।
ধুতরা
পাতার কার্যকারিতাঃ
১.কৃমি হলেঃ
ধুতরা পাতার রস ২-৩ ফোটা করে দুধের সাথে
খাওয়ালে কৃমি সংক্রমণ রোধ হবে। তবে সাবধান শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
২.টাক হলেঃ
মাঝে মাজে কারো কারো মাথায় এমন দেখা যায়
যেন মনে হয় তেলাপোকায় খেয়ে ফেলেছে বা ইঁদুরে কাটে দিয়েছে। কিন্তু ঘটনা এরকম না।
এটা এক প্রকার Anti-Fungus ফাঙ্গাস সংক্রমণ। এরকম হলে
ধুতরা পাতার রস মাথার যে জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে সেখানে ভাল করে লাগাতে হবে।
তবে দিনে একবারের বেশী এটা লাগানো উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ
নেওয়া উচিৎ।
৩.ঘাড় ও পিঠে ব্যাথা হলেঃ
ঘাড়ে বা পিঠে যেখানেই হোকনা কেন এই ব্যাথা,
ধুতরা পাতা ও গুড়া একসঙ্গে চিপে রস বের করে দিনে ২-৩ বার ৩-৪ ঘণ্টা পর পর লাগালে
ব্যাথা ভাল হতে পারে।
৪.সাদা আমাশয় হলেঃ
এধরণের সমস্যা হলে কাল ধুতরার শুকনা পাতা
ও ফুল বাসক পাতায় বেঁধে চুরুট বা বিড়ি তৈরি করতে হবে তার পর এটার ধোয়া বিড়ির মত
টানতে হবে।
৫.স্তন ব্যাথা হলেঃ
স্তন ব্যাথা হলে ধুতরা পাতার রস জ্বাল
দিয়ে মধুর মত ঘন করে তুলি দিয়ে লাগাতে হবে। তাহলে ব্যাথা সেরে যাবে।
কণ্টক তেল
প্রস্তুত প্রণালীঃ
কণ্টক তেল তৈরি করেও ধুতরা পাতা অনেক
উপকারে আসে। ধুতরা পাতা ডাটা সহ ১ কেজি সরিষার তেলের সাথে চিপে রস বের করতে হবে।
তারপর ঐ তেলটা চুলায় দিতে হবে। যখন ধোয়া বের হবে তখন তেলটা নামিয়ে ফেলতে হবে। এবার
ঠাণ্ডা হলে এটার সাথে আনুমানিক ১০০ গ্রাম শুধু ধুতরা পাতা বেটে অল্প অল্প করে দিয়ে
১৫-২০ মিনিট পরে ২ কেজি পানি দিয়ে রান্না করতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে তেলটা ভাল
করে ছেকে নিতে হবে।
কণ্টক
তেলের কার্যকারিতাঃ
১.ছুলিতেঃ
এই কণ্টক তেল ছুলির জায়গায় লাগিয়ে শুষ্ক
আবহাওায় ৩০ মিনিট বসে থাকতে হবে এতে ভাল কাজ হয়।
২.পাদদারী রোগ হলেঃ
পায়ের তলা ফেটে গেলে একে বলে পাদদালী রোগ।
এক্ষেত্রে কণ্টক তেল বেশ কার্যকরি।
৩.কানে যন্ত্রণা হলেঃ
এক্ষেত্রে কানে ২/১ ফোটা কণ্টক তেল দেওয়া
যায়।
৭.ফোঁড়া হলেঃ
ধুতরা পাতার রসের সাথে অল্প পরমাণ ঘি
মিশিয়ে গরম করে মালিশ করলে ফোড়া পেকে যায় এবং ফোঁড়া দ্রুত শুকাতে কার্যকরি ভুমিকা
রাখে।
৮.বাত বা গিটের ব্যাথা হলেঃ
সরষের তেলের সাথে ধুতরা পাতার রস মিশিয়ে
গরম করে মালিশ করলে বাত বা গিটের ব্যাথা নিরাময় হয়।
আরও বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন
No comments:
Post a Comment