বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বকুল ফল |
প্রাচীন
কাল থেকেই গাছ-পালার ব্যাবহায় অনস্বীকার্য। চিকিৎসা, আসবাবপত্র, জ্বালানী, অস্ত্র,
খাদ্যের জোগাড় ইত্যাদি নানা ব্যাবহারে গাছ-পালা অন্যতম ভূমিকা রাখে। আজকাল
ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও গাছের পাতা-লতা ব্যাবহার করা হয়। সবচেয়ে বেশী উপকারী উপাদানটি
হল অক্সিজেন যা আমরা নিশ্বাসের সাথে নিয়ে থাকি আর কার্বন-ডাই অক্সাইড যা
প্রশ্বাসের সাথে ত্যাগ করে থাকি এটা আমাদের প্রতি মুহুর্তের ব্যাবহার্য উপাদান।
ফলে গাছ না থাকলে আমরা অক্সিজেন কোথায় পেতাম কার্বন-ডাই অক্সাইড কোথায় যেত? যদিও
পৃথিবীর ৪ ভাগের ১ ভাগ গাছ-পালা থাকা জরুরী কিন্তু তা নেই। তার পরেও আমাদের চির
সবুজ বাংলাদেশে গাছপালার অভাব নাই। আমরা আজকে জানব বকুল গাছ সম্পর্কে।
বকুল গাছের পরিচিতিঃ
বকুল
ফুল কে না চিনেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে বকুল ফুল দেখলেই খোঁপায় দিতে মন চায়। আর এর
গন্ধ মনকে পাগল বানিয়ে দেয়। এর ভেষজ নাম Mimusops । অনেকে একে বহুল, বুকাল, বাকুল, বাঁকাল ইত্যাদি নামেও
চিনে। তবে বকুল নামটিই বেশী পরিচিত। ইংরেজী নাম Meddler, Spanish Cherry, Bullet Wood ইত্যাদি। সাধারণত বর্ষাকালে এ গাছ রোপণ করা হয়।
গ্রীষ্মকাল থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুল হয়। বকুল গাছ ৩০-৪০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। পার্কে,
রাস্তার পাশে ইত্যাদি স্থানে বকুল গাছ দেখা যায়। কিন্তু আমরা কি জানি বকুলের কিছু
ঔষধী গুণ রয়েছে?
বকুলের ঔষধী গুণাবলীঃ
এলকোহল
তৈরীতেও বকুলের ব্যাবহার রয়েছে।
সিরাপ তৈরীর পদ্ধতিঃ
পাকা
বকুল ফল আধা কেজি, চিপে ১ পোয়া মধু মিশিয়ে ৩ দিন ঢেকে রেখে পাতলা ন্যাকড়া দিয়ে
ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ১ ফোঁটা ১ ফোঁটা করে পড়বে। এটা সংগ্রহ করে রাখুন। এটাই বকুলের
সিরাপ।
মুত্র শিথিলতায়ঃ
যাদের
প্রস্রাবে সমস্যা আছে। যেমন মুত্র ঢিলা বা কষা হয়। ১০ গ্রাম বকুলের ছাল চটকে ১
পোয়া পানিতে সিদ্ধ করে অর্ধেক হয়ে গেলে ভাল করে ছেঁকে দিনে ৩ বার পান করুন। দৈনিক
১ চামচ করে ১৫/২০ দিন পান করুন। উপকার পাবেন।
দাঁতে পোকা হলেঃ
দাঁতের
মধ্যে গর্ত হলে বকুলের ছাল ১০ গ্রাম নিয়ে ৪ গ্রাম পানিতে সিদ্ধ করে ৪ ভাগের ১ ভাগ
হলে ছেঁকে প্রতিদিন সকালে ও রাতে ২ বার ৬/৭ চামচ করে মুখে দিয়ে ১০/১৫ মিনিট পর
ফেলে দিতে হবে। এভাবে ২ সপ্তাহ ব্যাবহার করুন।
দাঁত পড়ে গেলেঃ
অল্পবয়সীদের
ক্ষেত্রে দাঁত নড়লে কাঁচা বকুল ফল কিছু দিন চিবুলে দাঁতের গোঁড়া শক্ত হবে। তবে
শুকনো ফলের গুড়া দিয়ে দাঁত মাজলেও কাজ হবে।
কুষ্ঠ বদ্ধতায়ঃ
বকুলের
বীজের ভিতরের অংশ বাদ দিয়ে বাকিটা চুর্ণ করে ঘি মিশিয়ে পানের বোঁটায় লাগিয়ে শিশুর
পায়খানার রাস্তায় দিলে ১৫/২০ মিনিটের ভিতর কাজ হবে। তারপর ঘি বা নারিকেল তেল
লাগিয়ে দিবেন।
নাসা জ্বর হলেঃ
এ ধরনের
জ্বর সাধারণত সারা শরীরে ব্যাথা হয়। বকুল ফুলের চুর্ণের নস্যি নিলে খুব ভাল কাজ
হয়।
মাথা ব্যাথায়ঃ
ফিটকিরির
সাথে বকুল ফুল গুড়া করে ৮ ভাগের ১ ভাগ মিক্স করে রেখে দিন। এর নস্যি ব্যাবহার করলে
মাথা ব্যাথা দূর হয়।
শ্বেতী রোগেঃ
শ্বেতী
রোগ সবসময় এক হয় না তাই বুঝে নিতে হবে। যাদের শ্বেতী দুধের মত সাদা তাদের চিকিৎসা
দুঃসাধ্য। যাদের শ্বেতী দুধের মত সাদা নয় তাদের ক্ষেত্রে ঘন ক্বাথে বকুল বীজ ঘসে ঐ
দাগে আস্তে আস্তে ঘসতে হবে। আস্তে আস্তে দাগ হারিয়ে যাবে।
ঘন ক্বাথ তৈরী প্রনালিঃ
১০০
গ্রাম বকুলের ছাল ১ কেজি পানিতে সিদ্ধ করে অর্ধেক হলে ছেঁকে আবার ঘন করে আধা ছটাক
আনুমানিক হয়ে গেলে সেটাই ঘন ক্বাথ। এ ঔষধ সেবন করার সময় শাক-সজ্বি খাওয়াই ভাল।
এক্ষেত্রে কবিরাজি আরো নিয়ম আছে।
আমাশয় হলেঃ
প্রতিদিন
একটি পাকা বকুল ফলের শাঁস খেলে আমাশয় ভাল হয়।
বকুলের অন্যান্য ব্যাবহারঃ
বকুল
ফুল দিয়ে সুগন্ধি তৈরী হয়। বকুল ফল পাকলে খাওয়া যায়। মালয়েশিয়াতে বকুল ফলের আচার
খায়। দাঁতন হিসেবেও বকুলের ডাল ব্যাবহার করা হয়। বকুল কাঠ অনেক মূল্যবান ও
দুষ্প্রাপ্যও বটে। ঘর বাড়ি তৈরীতে বকুল কাঠ ব্যাবহার করা হয়।
স্বাস্থ্য
বিষয়ক আরো তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন
বিঃদ্রঃ বকুল খুব সুগন্ধি ফুল তাই আসুন
আমরা আমাদের বাড়ির আশেপাশে বকুল গাছ
লাগাই।
No comments:
Post a Comment