বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় পাথরকুচি। পাথরকুচি একটি গুল্ম জাতীয় ঔষধি গাছ। পাথরকুচি পাতাকে অনেকে পাঠান বেইদ হিসেবেও চিনে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Bryophillum । এ গাছ সর্বোচ্চ ১.৫-২ ফুট লম্বা হয়। পাথরকুচি পাতা অনেক মোটা ও মসৃণ হয়। আকারে প্রায় ডিমের মত এই পাতার চারপাশে ছোট ছোট খাঁজ থাকে। পাথরকুচি পাতা মাটিতে পুঁতে রাখলে গাছ হয়। ভিজা-স্যাতস্যাতে জায়গায় এ গাছ তাড়াতাড়ি বাড়ে।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতাঃ
সর্দি হলেঃ
সর্দি বসে গেলে বা পুরাতন হয়ে গেলে পাথরকুচি পাতা ছেঁচে রস করে এবং তা গরম করে ২ চা চামচ পরিমাণ সকাল-বিকাল ২বার পান করতে হবে।
রক্তপিত্তেঃ
পিত্ত জনিত ব্যাথায় রক্ত ক্ষরণ হলে সকাল-বিকাল ২ বার পাথরকুচি পাতার রস পান করলে এ সমস্যা দূর হবে।
মেহঃ
ঠান্ডা-সর্দির কারনে অনেক সময় শরীরে ফোঁড়া হয় এবং ব্যাথা করে। একেই বলে মেহ। এমতাবস্থায় পাথরকুচি পাতার রস ১ চা চামচ করে টানা ১ সপ্তাহ পান করলে মেহ ভাল হবে।
কাটা-ছিড়াঃ
অনেক সময় কেটে গেলে বা চাপ খেয়ে থেঁতলে গেলে টাটকা পাথরকুচি পাতা হালকা তাপে গরম করে কাটা-ছিড়ার স্থানে সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায় ও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
পেট ফাঁপা হলেঃ
পেট ফেঁপে গেলে পেট ফুলে যায়, হালকা বায়ু, প্রস্রাব আটকে যায় এক্ষেত্রে ১/২ চামচ পাথরকুচি পাতার রস অল্প পরিমাণ চিনির সাথে মিশিয়ে গরম করে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে রোগীকে পান করাতে হবে। তাহলে এধরনের সমস্যা দূর হবে।
মৃগী রোগ হলেঃ
মৃগী ব্যারাম উঠার সাথে সাথে ৮-১০ ফোটা পাথরকুচি পাতার রস রোগীর মুখে দিলে সাথে সাথে উপকার লক্ষ্য করা যায়।
শিশুদের পেট ব্যাথা হলেঃ
অনেক সময় শিশুদের পেটে ব্যাথা করে। এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস ৩০-৪০ ফোটা হালকা গরম করে শিশুর পেটে মালিশ করলে পেট ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে। তবে পেট ব্যাথা কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।
কিডনিতে পাথর হলেঃ
তবে পাথরকুচির সবচেয়ে কার্যকরী ঔষধী গুণাগুণ হল কিডনী এবং গলব্লাডারে পাথর হলে ২-৩ টি পাথরকুচি পাতা রস করে অথবা চিবিয়ে খেলে পাথর আস্তে আস্তে অপসারণ হয়ে যাবে।
জন্ডিস হলেঃ
জন্ডিস বা লিভারের যে কোন সমস্যায় পাথরকুচি পাতার রস খুব উপকারী।
উচ্চ রক্তচাপেঃ
মুত্রথলির সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পাথরকুচি খুব উপকার করে।
পাইলস হলেঃ
শুধু পাইলস নয় অর্শ্ব-গেজ হলেও পাথরকুচি পাতা খুব উপকারী। এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রসের সাথে অল্প পরিমাণ গোল মরিচ মিশিয়ে পান করতে হবে।
ডায়রিয়া, কলেরা বা আমাশয় হলেঃ
এধরনের সমস্যায় ৩ মিলিঃ পাথরকুচি পাতার রসের সাথে সমপরিমাণ জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে একটানা কয়েকদিন খেলে উপকার হবে।
বিষাক্ত পোকায় কামড়ালেঃ
মৌমাছি, ভ্রমরা, বিচ্ছু ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কোন পোকায় কামড়ালে পাথরকুচি পাতার রস গরম করে কামড়ানো স্থানে সেঁক দিলে ব্যাথা সেরে যাবে।
ত্বকের যত্নেঃ
পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। ব্রণ ও ছোট ফোঁড়া হলে পাথরকুচি পাতা বেটে মুখে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে শুধু ব্রণ নয় ত্বক জ্বালা-পোড়া করলেও পাথরকুচি পাতা বাটা খুব ভাল কাজ করে।
শরীর জ্বালা-পোড়া করলেঃ
অনেক সময় কোন কারন ছাড়াই শরীর জ্বালা-পোড়া করে, অস্বস্থি লাগে। এক্ষেত্রে ২ চামচ পাথরকুচি পাতার রস আধা কাপ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সকাল-বিকাল ২ বার পান করলে এ ধরনের সমস্যা দূর হয়।
সাস্থ্য সম্পর্কিত আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে
বিঃদ্রঃ পাথরকুচি পাতা অত্যন্ত উপকারী ও প্রচুর ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি গাছ। এ গাছ বেশী বড় হয় না অল্প জায়গাতেই বেড়ে উঠে। তাই আসুন আমাদের প্রত্যেকের বাড়ির আনাচে-কানাচে পাথরকুচি গাছ লাগাই। সুস্থ-সবল ও শান্তিপুর্ণ জীবিন যাপন করি।
No comments:
Post a Comment