বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
প্রাচীন কাল থেকেই গাছ-পালার
ব্যাবহার অনস্বীকার্য। মানুষের যত রকম চাহিদা সবই মতিয়ে আসছে গাছ-পালা। গাছ-পালার
রয়েছে কিছু ঔষধী গুণাগুণ। এই ঔষধী গুণাগুণ আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে অত্যন্ত
গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়। এমনই ঔষধী গুণাগুণ সম্পন্ন গাছ হল বাসক। আমরা আজ জানব
বাসকের উপকারিতা।
বাসক পাতাঃ
আমরা প্রায় সকলেই বাসক পাতা
চিনি। এর বোটানিক নাম Adhatoda Vasica। বাসকের পাতা, শিকড় ও ছাল ব্যাবহৃত হয়।
বাসক পাতার মধ্যে কুইনাজলিন এলকালয়েডস, ভ্যাসিসিন, ভ্যাসিসিন এন অক্সাইড,
ভ্যাসিসিনোন। ডিওক্সিভ্যাসিসিন, অক্সিভ্যাসিসিন, মাইয়োন্টোন ইত্যাদি ভেষজ উপাদান
বিদ্যমান। বাসক পাতার রসে বিষাক্ত তেলের পরিমাণ কম তাই এটা খুব বেশী নিরাপদ।
বাসক ফুলঃ
বাসক ফুলে বি-সিটোস্টারল,
ডি-গ্লুকোসাইড, কায়েম্ফেরল, কায়েম্ফেরল্যান্ড, গ্লুকোসাইডস, ক্যারোটিন ইত্যাদি
উপাদান বিদ্যমান।
বাসকের শিকড়ঃ
বাসকের শিকড়ে রয়েছে
ভ্যাসিসিনোলোন, ভ্যাসিকোল, পেগনিন, হাইড্রোক্সিক্যালন, গ্লুকোজাইল অক্সিক্যাল্কন
বিদ্যমান।
বাসকের উপকারিতা ও ব্যাবহারঃ
১. বাসক পাতা ভাল করে রস করে
মধু মিশিয়ে ১-২ চামচ করে সেবন করলে সর্দি-কাশি ভাল হয়।
২. উকুন জনিত সমস্যায় বাসক
পাতার রস গোসলের কিছুক্ষণ আগে মাথায় লাগিয়ে তারপর গোসল করুন। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন
ব্যাবহার করলে উকুন মরে যাবে।
৩. ক্বফ জমে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়,
অনেক শক্ত কাশি হয়। বাসক পাতার রস ১-২ চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে ক্বফ গলে
বের হয়ে যায়।
৪. ফোঁড়া হলে ও ফোঁড়ায় ব্যাথা
হলে বাসক পাতা বেঁটে প্রলেপ দিন। এতে ব্যাথা ও ফোড়া দুটুই ভাল হয়ে যাবে।
৫. মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে ১৫/২০
টি বাসক পাতা ছেঁচে অল্প পানিতে সিদ্ধ করে কুসুম গরম অবস্থায় কুলকুচি করুন মাড়ি
থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
৬. যাদের চুলকানি রয়েছে তারা
কচি কয়েকটা বাসক পাতা কাঁচা হলুদের সাথের বেঁটে চুলকানির স্থানে লাগান। নিয়মিত
কয়েকদিন ব্যাবহারের ফলে চুলকানি দূর হয়ে যাবে।
৭. প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া করলে
বাসকের ফুল বেঁটে একটু মিছরি মিশিয়ে শরবত বানিয়ে পান করলে প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়া
বন্ধ হয়ে যাবে।
৮. জন্ডিস হলে বাসক পাতা বা ফুল
রস করে অল্প মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৯. জ্বর হলে বাসকের শিকড় ৮-১০
গ্রাম পরিমাণ ১০০ মিলিঃ পানিতে ফুটিয়ে ৪ ভাগের ১ ভাগ হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন। এবার
এটা ২ বারে খেয়ে ফেলুন জ্বর্বর সাথে কাশিও দূর হবে।
১০. হাঁপানি বাঃ শ্বাসকষ্ট যাদের
রয়েছে তারাই বুঝেন এটা কেমন রোগ। এ সমস্যায় বাসক পাতা শুকিয়ে বিড়ির মত পেঁচিয়ে
ধূমপানের মত খান।
১১. গায়ে ঘামের দুর্গন্ধ হলে
লজ্জার ব্যাপার। তারা বাসক পাতার রস সমস্ত শরীরে মাখুন। নিয়মিত। গায়ে দুর্গন্ধ হবে
না।
১২. গায়ের রং ফর্সা করতে
শংখচূর্ণ ও বাসক পাতার রস মিশিয়ে গায়ে মাখুন। তবে এর কাজ ধীরের ধীরে হয়।
১৩. বাসক পাতার রস নিয়মিত পান করলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়।
১৪. যাদের শরীরে দাদ রয়েছে তারা বাসক পাতার রস দাদে লাগান। ১-২ দিনের মধ্যে দাদ
দূর হয়ে যাবে।
অন্যান্য আরো কিছু উপকারিতা:
বাসকের পাতা সবুজ খাদ্য হিসেবে
ব্যবহৃত হয় এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায়। বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয়
পদার্থ আছে যায় ফলে ছত্রাক জন্মায় না। পোকামাকড় ধরে না বলে বাসক ফল প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতায় কিছু দুর্গন্ধ আছে বলে পশুরা এ পাতা খায় না। সেই কারণে চাষ আবাদের জন্য জমি উদ্ধারের কাজে বাসকের পাতা বিশেষ উপকারী।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরো তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন
বাসক পাতা |
বিঃদ্রঃ বাসক গাছ বাড়ির আঙিনায় লাগাতে পারেন। রোগ তো বলে
আসে না! ঔষধের পরিবর্তে প্রকৃতি থেকে সাহায্য নিন। সুস্থ্য থাকুন।
No comments:
Post a Comment