কালিজিরা তেল |
প্রাচীন কাল থেকেই গাছ-পালার ব্যাবহার অনস্বীকার্য। চিকিৎসা, আসবাবপত্র, জ্বালানী, অস্ত্র, খাদ্যের জোগাড় ইত্যাদি নানা ব্যাবহারে গাছ-পালা অন্যতম ভূমিকা রাখে। আজকাল ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও গাছের পাতা-লতা ব্যাবহার করা হয়। সবচেয়ে বেশী উপকারী উপাদানটি হল অক্সিজেন যা আমরা নিশ্বাসের সাথে নিয়ে থাকি আর কার্বন-ডাই অক্সাইড যা প্রশ্বাসের সাথে ত্যাগ করে থাকি এটা আমাদের প্রতি মুহুর্তের ব্যাবহার্য উপাদান। ফলে গাছ না থাকলে আমরা অক্সিজেন কোথায় পেতাম কার্বন-ডাই অক্সাইড কোথায় যেত? যদিও পৃথিবীর ৪ ভাগের ১ ভাগ গাছ-পালা থাকা জরুরী কিন্তু তা নেই। তার পরেও আমাদের চির সবুজ বাংলাদেশে গাছপালার অভাব নাই। আজ আমরা জানব কালিজিরা সম্পর্কে।
কালিজিরা নামে আমরা প্রায় সকলে চিনলেও এর আরো কিছু নাম রয়েছে। কালো কেওড়া, রোমান করিয়েন্ডার বা রোমান ধনে, ফিনেল ফ্লাওয়ার, ফিনেল, হাব্বাটুসউডা, ও কালজ্ঞি ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানীক নাম Nigella Sativa। তো যে নামেই ডাকুননা কেন এই কালিজিরার রয়েছে হাজার হাজার উপকারিতা যা হয়ত আমি বলে শেষ করতে পারব না। মানবদেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে শরীরের কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে এই কালিজিরার জুড়ি নেই। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেয়া যাক কালিজিরার কি কি সাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
কালিজিরার সাস্থ্য উপকারিতাঃ
স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে কালিজিরাঃ
১ চা চামচ কমলার রস/পুঁদিনা পাতার রস/১ কাপ রঙ চায়ের সাথে ১ চা চামচ কালিজিরার তেল মিশিয়ে নিয়মিত দিনে ৩ বার সেবন করবেন। এতে দুশ্চিন্তা দূর হয়। কালি জিরা একধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপ্টিক, যা আমাদের মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও মেধা শক্তিকে বৃদ্ধি করে।
মাথা ব্যাথায় কালিজিরাঃ
যাদের মাথা ব্যাথার সমস্যা রয়েছে তারা ১/২ চামচ কালিজিরার তেল মাথায় ভাল করে লাগাবেন এবং ১ চামচ কালিজিরার তেল মধুর সাথে টানা ২ সপ্তাহ সেবন করবেন মাথা ব্যাথা সেরে যাবে।
সর্দিতে কালিজিরাঃ
১ চা চামচ কালিজিরার তেল সম পরিমাণ মধু অথবা ১ কাপ রঙ চায়ের সাথে মিশিয়ে দিনে ৩ বার সেবন করবেন এবং মাথায় ও ঘাড়ে মালিশ করবেন যত দিন না সর্দি সারে। এছাড়া ১ চা চামচ কালিজিরার তেলের সাথে ৩ চামচ মধু ও ২ চামচ তুলিসী পাতার রস মিশিয়ে পান করবেন এতে জ্বর, সর্দি, কাশি সব সারে। সর্দি বসে গেলে কালিজিরা বেঁটে কপালে প্রলেপ দিন। পাতলা কাপড়ে কালিজিরা বেঁধে শুঁকতে পারেন ১ মিনিটেই কাজ হবে ইনশাল্লাহ।
বাতের ব্যাথায় কালিজিরাঃ
বাতের ব্যাথা হলে ব্যাথার স্থান ভাল করে ধুয়ে খালি হাতে মালিশ করার পর কাঁচা হলুদের রস মধু বা ১ কাপ রঙ চা ও কালিজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ সেবন করবেন।
চর্মরোগে কালিজিরাঃ
খুস-পাচড়া বা অন্যান্য চর্মরোগ হলে কাঁচা হলুদ মধু বা রঙ চা ও কালিজিরার তেল মিশিয়ে দিনে ৩ বার ২/৩ সপ্তাহ সেবন করবেন।
হৃদরোগে কালিজিরাঃ
যাদের হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে তারা কালিজিরার তেলের সাথে দুধ মিশিয়ে পান করতে পারেন এবং কালিজিরার তেল নিয়মিত বুকে মালিশ করতে পারেন এভাবে ৪/৫ সপ্তাহ ব্যাবহার করলে আরাম পেতে পারেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কালিজিরাঃ
প্রতিদিন সকালে কালিজিরার তেল সারা গায়ে মালিশ করবেন এবং কাঁচা রদুন চিবিয়ে খাবেন এবং রোদে আধাঘন্টা বসে থাকবেন। এছাড়া উপরোল্লেখিত নিয়মে সেবন করলেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শ্বাসকস্টে কালিজিরাঃ
হাঁপানী বা শ্বাসকস্টে কালিজিরা ভর্তা খাবেন। ১ কাপ রং চা, কালিজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার সেবন করবেন।
অর্শ্ব রোগে কালিজিরাঃ
১ চামচ মাখন ও তিলের তেল, কালিজিরার তেল খালি পেটে নিয়মিত প্রতিদিন খেলে অর্শ্ব রোগ সেরে যায়।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে কালিজিরাঃ
১ চিমটি কালিজিরা ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ কমে যায়।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালিজিরাঃ
নারী-পুরুষের যৌন সমস্যায় কালিজিরা বেশ উপকারি। প্রতিদিন খাবারের সাথে কালিজিরা খেলে স্পার্ম ঘন হয়। স্পার্ম বৃদ্ধি পায়।
মহিলাদের মাসিকের সমস্যায় কালিজিরাঃ
কাঁচা হলুদের সাথে সম পরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে কালিজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার সেবন করলে এধরনের সমস্যা দূর হয়।
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কালিজিরাঃ
যেসকল মায়েরা দুগ্ধহীনতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন ৮/১০ গ্রাম কালিজিরা গুড়া করে সেবন করবেন। ২ সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
তারুণ্য বজায় রাখতে কালিজিরাঃ
কালিজিরায় রয়েছে লিনোলেইক ও লিনোলেনিক নামক প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড যা আমাদের ত্বককে রুক্ষতার হাত থেকে রক্ষা করে।
গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যায়ঃ
১ চামচ কালিজিরার তেলের সাথে মধু মিশিয়ে দিনে ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ সেবন করলে গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা দূর হয়।
জন্ডিস জনিত সমস্যায় কালিজিরাঃ
জন্ডিস বা লিভারের সমস্যায় ১ গ্লাস ত্রিফলার শরবতের সাথে ১ চামচ কালিজিরার তেল মিশিয়ে দিনে ৩ বার ১/১.৫ মাস সেবন করুন আশা করি সমাধান হবে।
শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে কালিজিরাঃ
বাড়ন্ত শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত কালিজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কালিজিরাঃ
২ চামচ কালিজিরা বাঁটা পানি দিয়ে দিনে ২ বার টানা খেতে থাকুন ১ মাস পরে হজম শক্তি বেড়ে যাবে।
দাঁতের সমস্যায়ঃ
কুসুম গরম পানিতে কালিজিরা দিয়ে কুলকুচি করলে জিহ্বা, তালু, দাঁতের জীবাণু মরে যায় ও দাঁতের সাস্থ্য ভাল থাকে ও দাঁত ও মাড়ি ব্যাথা হলে ব্যাথা সেরে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কালিজিরাঃ
নিয়মিত কালিজিরা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সহজে কোন অসুখ হয় না।
কিডনীতে পাথর হলে কালজিরাঃ
২৫০ গ্রাম কালিজিরা গুড়া ও মধু মিশিয়ে গরম পানিতে মিশিয়ে সেবন করুন কিছু দিন পরে সমস্যার সমাধান লক্ষ করতে পারবেন।
চোখ ব্যাথা হলেঃ
চোখে ব্যাথা হলে চোখের উপরিভাগে কালিজিরার তেল মালিশ করে ঘুমাতে যান চোখের ব্যাথা সেরে যাবে।
ডায়রিয়া হলেঃ
ডায়রিয়া হলে স্যালাইনের পাশাপাশি ১ কাপ দই ও কালিজিরার তেল দিনে ২ বার সেবন করুন।
জ্বর হলে কালিজিরাঃ
জ্বর হলে সকাল-বিকাল লেবুর রসের সাথে ১ চামচ কালিজিরার তেল সেবন করুন। জ্বর সেরে যাবে।
আঁচিল হলে কালিজিরাঃ
আঁচিল হলে হেলেঞ্চা দিয়ে আঁচিল ঘসলে আস্তে আস্তে উধাও হয়ে যাবে।
সাস্থ্য সম্পর্কিত আরো তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন
কালিজিরা তেল |
সতর্কতাঃ গর্ভাবস্থায় ও ২ বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কালিজিরার তেল সেবন করা উচিৎ নয় তবে বাহ্যিক ব্যাবহার করা যাবে।
বিঃদ্রঃ কালিজিরা সম্পর্কে এত কিছু বলার নাই। কারন এই কালিজিরা সম্পর্কে আমাদের নবীজী (সাঃ) বলেছেন...
কালিজিরা মৃত্যু ছাড়া সর্বরোগের মহৌষধ।
No comments:
Post a Comment